রহস্যঘেরা টাইটানিক
টাইটানিক- স্বপ্নের জাহাজ--- কোনো দিনও ডুববে না দাবি করেছিল টাইটানিক। কিন্তু ১৯১২ সালে প্রথম বিহারেই ১৫০০ যাত্রী নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় বিলাসবহুল টাইটানিক। এরপর শুরু হয় ডুবে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান। প্রচারিত হতে থাকে নানা রহস্যময় ও রোমাঞ্চকর কাহিনী। শত বছর পার হয়ে গেলেও আজো মানুষ সঠিক কারণ জানে না! অনেকের মধ্যেই এ নিয়ে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত রয়েছে। কেউ এর পেছনে কোন না কোন যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ কোনো প্রকার সূত্র ছাড়াই বলছেন টাইটানিক ডোবার পেছনের মনগড়া কাহিনী। ১৯৯৮ সালের ১৯ অক্টোবরে টাইমস জানিয়েছে, এরকমই এক রহস্যময় কাহিনী। টাইটানিক জাহাজে নাকি ছিল মিসরীয় এক রাজকুমরীর অভিশপ্ত মমি। বলা হয় মমির অভিশাপের কারণেই ভাসমান বরফদ্বীপের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল টাইটানিক। গল্পটি বহু বছর ধরে প্রচারিত হলেও এর পালে বিশেষ হাওয়া লাগে অস্কার বিজয়ী টাইটানিক ছবিটির ব্যাপক জনপ্রিয়তার পর। সত্যিই কী তাই? এরকমটি বলার অনেক কারণও অবশ্য রয়েছে। সেই রাজকুমারীর নাম ছিল আমেন-রা। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে মারা যান তিনি। ১৮৯০ সালের শেষার্ধে এক ধনী ইংরেজ লুঙ্রের কাছে এক প্রত্নতাত্তি্বক খননকাজ দেখতে যান। তিনি সেখান থেকেই কেনেন কফিনশুদ্ধ রাজকুমারীর এই মমিটি। এরপর তিনি জাহাজে করে মমিটি দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন কিন্তু বন্দরে মমিটি গ্রহণ করার জন্য নিজে উপস্থিত থাকতে পারলেন না। তিনি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। বাস্তবিকই তাকে আর কোনোদিনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার সঙ্গী ছিল তিনজন। মমির অভিশাপ তাদেরও রেহাই দেয়নি। একজন কিছুদিন পরই মারা যান, দুর্ঘটনায় একজনের হাত কাটা পড়ে আর অপরজন দেউলিয়া হয়ে যান। কফিনটি ইংল্যান্ডে পৌঁছলে একজন ব্যবসায়ী তা কিনে নেন। এর ফলে সেই ব্যবসায়ীর পরিবারের তিনজন মোটর দুর্ঘটনায় আহত হন এবং তার বাড়িতে আগুন লাগে। মমিটিকে অভিশপ্ত মনে করে সেই ব্যক্তি এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে দান করে দেন। মিউজিয়াম এটিকে সাদরে গ্রহণ করল। কিন্তু মিউজিয়ামের কর্মচারীরা রাতের বেলা কফিনের ভেতর থেকে তীব্র কান্নার শব্দ শুনতে পেত। সকালবেলা প্রদর্শনী কক্ষের জিনিসপত্রগুলো সব এলোমেলোভাবে পড়ে থাকতে দেখা গেল। এরই মধ্যে মারা গেল এক প্রহরী। এ কথা জানতে পেরে এক ফটোগ্রাফার কফিনের ছবি তুলে আনলেন। ছবি ডেভেলপ করার পর ছবিতে যে বীভৎস রূপ তিনি দেখলেন তাতে আত্দহত্যা করেই তিনি মুক্তির পথ খুঁজলেন। ব্রিটিশ মিউজিয়ামও আর এসব সহ্য করতে পারছিল না। কিন্তু মমিটির কুখ্যাতি এতটাই ছড়িয়েছিল যে, এ থেকে তারা খুব সহজে মুক্তি পায়নি। অবশেষে একজন আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ সবকিছুকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে কিনে নিলেন মমিটি আর টাইটানিকে চড়িয়ে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। আর এরপরের ঘটনা তো সবারই জানা। তবে এই গল্পের আরেকটি ভার্সনে বলা হয়, সেই প্রত্নতত্ত্ববিদ টাইটানিকের এক নাবিককে ঘুষ দিয়ে মমিটি লাইফবোটে তোলেন এবং এটি আমেরিকা পৌঁছায়। এরপর মমিটি আবার হাতবদল হয়ে আরো কয়েকবার সমুদ্রবিহার করে অবশেষে সাগরতলে আশ্রয় নেয়। এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা শিপিং রেকর্ডে খোঁজ করে টাইটানিকে কোনো মমি তোলার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে এর বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে বলা হয় যে, সেই প্রত্নতত্ত্ববিদ নাকি এটি গোপনে বিদেশে পাচার করছিলেন। আবার দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কোনো যাত্রীও লাইফবোটে মমি ওঠানোর কথা উল্লেখ করেননি। তাছাড়া কোনো উদ্ধারকারীও মমির কথা তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেননি। সম্ভবত এই গল্পের সূচনা হয় ডগলাস মুরে ও টি. ডবি্লউ. স্টিড নামক দুই ইংরেজের কাছ থেকে। তারা দাবি করেন যে, তাদের এক সহযোগী ইজিপ্ট থেকে একটি মমি কিনে তার বাসার বসার ঘরে এটি সাজিয়ে রেখেছিল। পরদিন সকালে দেখা গেল ঘরের ভঙ্গুর জিনিসপত্রগুলো ভেঙে চূরমার হয়ে গেছে। এবার ঘর পাল্টে দেওয়া হলো। কিন্তু পরের সকালে দেখা গেল একই কাণ্ড। দুজনই ব্রিটিশ মিউজিয়ামে মমির কফিনটি দেখতে গিয়েছিলেন। শুধুই কফিন, আসলে সেখানে কোনোদিনই কোনো মমি ছিল না। কফিনের ডালার গায়ের ভীতিকর ছবিটি দেখে তারা বুদ্ধি আঁটে। ভাঙচুর আর ভয়ঙ্কর ডালার গল্প দুটি জোড়া দিয়ে নতুন গল্পটি বিক্রি করে দিলেন পত্রিকার কাছে। পরে এই কাহিনীতে ঘটে টাইটানিকের অন্তর্ভুক্তি। এ খবর প্রকাশিত হয় ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমসসহ আরো অনেক পত্রিকায়। সম্ভবত এই গল্পে টাইটানিকের অংশটুকু ঢোকানোর প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল ১৮৩৮ সালে মেনকরের কফিন হারিয়ে যাওয়া। প্রাচীন রাজত্বকালের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হওয়া এই কফিনটি আনা হচ্ছিল ইজিপ্ট থেকে ইংল্যান্ডে। দ্য বিট্রাইস নামের জাহাজটি কার্টাগিনার কাছে কোথাও ডুবে গেলে মমিটিও সাগরতলে নিমজ্জিত হয়। তবে ব্রিটিশ মিউজিয়াম এসব কাহিনী সবসময়ই অস্বীকার করে আসছে। আর রাজকুমারী আমেন-রা'র কফিনটি এখনো ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বহাল তবিয়তেই আছে। প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শক আসে শুধু এই অভিশপ্ত মমির কফিনটি দেখতে। সত্যি ঘটনা যাই হোক না কেন টাইটানিক ডোবার রহস্য কিন্তু আজো রহস্যই রয়ে গেছে। এদিকে ১৯৯৭ সালের ব্যবসাসফল ছবি টাইটানিক আবার মুক্তি পেতে যাচ্ছে। তবে তা সাধারণ ছবির মতো নয়, ত্রিমাত্রিক আকারে। ছবির পরিচালক জেমস ক্যামেরন জানান, ছবির ত্রিমাত্রিক সংস্করণ ২০১২ সালে মুক্তি পেতে পারে। ওই জাহাজডুবির শততম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তারা এ প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বোঝাই যাচ্ছে, টাইটানিক নিয়ে আজো মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই।
Collected by Google.........
To Read More About TITANIC Click Here
No comments:
Post a Comment